সিলেটের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সবুজে ঘেরা চা-বাগানের দৃশ্য। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট আমাদের সোনার বাংলার অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ একটি অঞ্চল। চা-বাগানের পাশাপাশি এখানকার পাহাড়, নদী, ও ঝর্ণাও বিশেষভাবে পরিচিত ও আকর্ষণীয়। তাছাড়া, হযরত শাহজালাল (র.), হযরত শাহপরাণ (র.) এবং আরও বহু আউলিয়ার স্মৃতিধন্য এই প্রাচীন জনপদকে অনেকেই ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।
আপনি যদি বাংলাদেশে বসবাস করে থাকেন এবং এখনও সিলেট ভ্রমন করেন নাই তাহলে আর দেরি না করে সময় সুযোগ বুজে একটা ট্যুর দিয়ে ফেলতে পারেন। প্রিয় পাঠক, আজকের লেখাজুড়ে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি, আমার দেখা সিলেটের সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। মজার বিষয় হচ্ছে সিলেটের এই সকল ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর বেশ কয়েকটিতে আমি একাধিকবার ঘুরতে গিয়েছে এবং আগামীতেও আবার যাওয়ার প্লান আছে।
নিচে সিলেটের সেরা ৫টি দর্শনীয় স্থান তুলে ধরা হলো:
১) জাফলং
সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর স্পট হলো জাফলং। সেখানে গেলে মনে হয়, আরও কয়েকটা দিন থেকে যাই! মেঘ ও পাহাড়ের মিতালি জাফলংকে দিয়েছে এক অনন্য সৌন্দর্য। আর মেঘ-পাহাড়ের লুকোচুরিতে এখানে তৈরি হয় মনমুগ্ধকর দৃশ্যপট, যা আপনাকে নেশাতুর করে তুলবে। সিলেটের জাফলং-এর চা-বাগান ও খাসিয়া পল্লীও কিন্তু ঘুরে দেখার মতো। যেখানে গেলে আপনি একটি জাতির জীবন বৈচিত্র্য সম্পর্কে একটি নতুন ধারনা নিয়ে আসতে পারবেন। আর আপনি যদি খাসিয়াদের বিশেষ উৎসবের দিনে এই এলাকায় ঘুরতে যেতে পারেন তাহলে তো পুরাই ছক্কা।
২) বিছানাকান্দি
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত বিছানাকান্দি। সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে বিছানাকান্দি অন্যতম। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটি এক স্বর্গরাজ্যও বলা চলে। পাহাড়, নদী ও পাথর মিলিয়ে এক অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনার মন কেড়ে নিবে। বিছানাকান্দির সৌন্দর্য উপভোগ করার সেরা সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। এ সময়ে পানিতে নদীর দুইকুল ভরে উঠে যা এই এলাকাকে আকর্ষণীয় করে তুলে।
৩) শ্রীমঙ্গল
শ্রীমঙ্গলকে বলা হয় চায়ের রাজধানী। আমি গত এপ্রিলে শ্রীমঙ্গল গিয়েছিলাম। কোন কোলাহল নেই। চারদিকে সবুজের সমারেহ, ছোট ছোট পাহাড়ের গায়ের আঁকাবাঁকা রাস্তা। আর যখন বৃষ্টি নামে এক লোভনীয় পরিবেশ তৈরি হয়। শ্রীমঙ্গলে একদিন অবস্থান করে একটি চাদের গাড়ি নিয়ে ঘুড়লে আপনার মোটামুটি সবকিছু দেখা হয়ে যাবে। তবে সময় নিয়ে ঘুড়লে আপনি আর বেশি রিলাক্স করতে পারবেন। ওহ আরো একটি কথা, ব্যাচেলরদের জন্য শ্রীমঙ্গল ট্রিপ অতোটা ভালো নাও লাগতে পারে যদি না আপনি আশেপাশের এলাকা ভিজিট না করেন।
৪) মাধবকুণ্ড ঝর্ণা
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণা কোনটি জানেন! হ্যা মাধবকুণ্ড ঝর্ণা হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণা। এই মাধবকুণ্ড ঝর্ণা সিলেট জেলার পূর্ব দিকে অবস্থিত। এখানে যাওয়ার জন্য আপনার কিছুটা ট্রাকিং করতে হবে। তবে কাছে পৌছাতে পারলে আপনার সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। ঢাকা থেকে ট্রেন কিংবা বাসে করে বিয়ানীবাজার হয়ে পরিবহণ বাসে করে কাঁঠালতলী নেমে সেখান থেকে সিএসনজি নিয়ে মাধবকুণ্ড ঝর্ণায় যেতে পারেন। তবে যেহেতু ট্রাকিং করতে হবে তাই যাত্রা পথে এনার্জি নষ্ট না করা ও রিলাক্সে যাওয়াই উত্তম। এ জন্য আপনি ঢাকা থেকে ঢাকা সিলেট রেন্ট-এ-কার থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে সরাসরি মাধবকুণ্ড ঝর্ণা যেতে পারেন। বিশেষ করে গ্রুপ করে হাইএস মাইক্রোবাস বা নোয়া গাড়ি নিয়ে গেলে মাথাপিছু গাড়ি ভাড়া বেশ কম পড়বে।
৫) ভোলাগঞ্জ
ভোলাগঞ্জ অনেকের কাছে সাদা পাথর নামেও পরিচিত। এটি সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত। নদি, পাহার ও পাথরে বেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর গেলে আপনার প্রান জুড়িয়ে যাবে। ভোলাগঞ্জের সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় দৃশ্য হচ্ছে এর সীমান্তে দাড়িয়ে থাকা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উঁচু উঁচু পাহার। বর্ষার দিনে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল কি যে দারুন একটা ভাব তৈরি করে আহা। বৃষ্টি ছাড়া অন্য সিজনে গেলে অতোটা ভালো লাগবে না। তবে শীতকালে শীতকালীন মেঘ পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সিলেট শহর থেকে বাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি বা বাইকে করে ভোলাগঞ্জ যেতে পারেন।
সর্বশেষ
আমি ঢাকা থেকে বেশ কয়েকবার সিলেট ঘুরতে গিয়েছি। সিলেটে আরও কিছু দর্শনীয় ও ঐতিহ্যবাহী স্থান আছে আপনারা চাইলে সেখান থেকেও বেড়িয়ে বা ঘুরে আসতে পারেন। ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব তেমন বেশি না। সিজন বুজে বেড়াতে গেলে আপনি বেশ উপভোগ করতে পারবেন। সিলেটের দর্শনীয় স্থান নিয়ে আমাদের লেখা আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে জানাতে পারেন।